কুদরতে খোদা বললেন, মোরশেদ কী? মোরশেদ হচ্ছেন এমন একজন মহামানব যিনি মুরিদকে মনজিলে মকসুদে পৌঁছাইতে সক্ষম। মোরশেদ হচ্ছেন এমন একজন মহামানব যিনি মুরিদকে ‘আল্লাহ’ পাওয়াইতে সক্ষম। মোরশেদ হচ্ছেন এমন একজন মহামানব যিনি মুরিদকে ‘রাসুল’ পাওয়াইতে সক্ষম।’ গোলাম কুদরতে খোদা দেওয়ানবাগীর উচ্চমর্যাদা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, এমন মোরশেদের কদমে আসার সুযোগ হয়েছে, যাকে আল্লাহ এতো উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন, দুনিয়াতে আর কোনো অলিআল্লাহ, নবি রাসুলকে এতো উচ্চর্যাংক দেন নাই। আল্লাহ তাকে আকাশের পূর্ণিমার চাঁদের মতো উচ্চর্যাংক দিয়েছেন। আমরা শুধু মোরশেদ পাই নাই, সর্বোৎকৃষ্ট মোরশেদ পেয়েছি। তিনি বলেন, আপনার আমার মোরশেদ কে? দেওয়ানবাগী। বিশ্বাস করেন এই কথা? মনে প্রাণে মানেন এই কথা? তাহলে মনে প্রাণে আজকে থেকে এইটা মানেন, কেয়ামত পর্যন্ত আপনার আমার মোরশেদ থাকবেন দেওয়ানবাগী। কেয়ামত পর্যন্ত এই মোহাম্মদি ইসলামের মোরশেদ থাকবেন কে বলেন? কে থাকবেন? দেওয়ানবাগী। কেয়ামত পর্যন্ত এই মোহাম্মদি ইসলামের মোরশেদ হবেন দেওয়ানবাগী। আমি স্পষ্টরূপে দেওয়ানবাগীর গোলাম কুদরতে খোদা বলছি- চিরকাল, কেয়ামত পর্যন্ত আপনার আমার মোরশেদ হবেন দেওয়ানবাগী। কে হবেন? দেওয়ানবাগী।
" Watch Video Here - এখানে ভিডিও দেখুন "
যদি আপনারা এইটা মানতে পারেন, এই কথা অন্তরে বসাইতে পারেন কেয়ামত পর্যন্ত, মনে রাইখেন ওই মোরশেদ আপনার কবরে যাবে, আর গিয়ে বলবে এ আমার গোলাম ছিল, একে হাজির করো। সম্মানিত আশেকে রাসুলেরা, মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা আমার নাই, আমি শুধু মোরশেদের কাছে আপনার জন্যে সুপারিশ করতে পারি। এই কথা বলে কুদরতে খোদা আবার বলেন, মুক্তিদাতা কে বলেন? দেওয়ানবাগী। ঠিক না, ঠিক না? মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা কার? মুক্তির সুপারিশকারী কে? আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী কে? (ভক্তরা ক্রসগলায় বলেন, দেওয়ানবাগী) মনে থাকবে? যদি এই কথা চিরকাল অন্তরে রাখতে পারেন কোনো দিন বেঈমান হবেন না। যদি বেঈমানের হাত থেকে বাঁচতে চান আমি গোলাম কুদরতে খোদার এই কথা মনে রাইখেন। যতদিন বাঁচবো দেওয়ানবাগীকে মোরশেদ রুপে মানবো। যতদিন বাঁচবো দেওয়ানবাগীর কদমের নিচে থাকবো। মৃত্যুর আগপর্যন্ত, নিজের জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত দেওয়ানবাগী আমাদের মোরশেদ থাকবেন।
এমন অসংখ্য উক্তি আছে দেওয়ানবাগীর। তার গুণ গেয়ে জারিগান করা হয়েছে। তার
 |
Photo : দেওয়ানবাগী পীর । |
নামে দুরদ তৈরি করা হয়েছে। তার নামে মিলাদ করা হয়, দুরদ পাঠ করা হয়। মুরিদরা সপ্তাহে অন্তত একদিন তার নামে জিকির করে। মতিঝিলে তার অট্রালিকা বাবে রহমতের ছাদে সবুজ রঙের গম্বুজ করা হয়েছে। সেখানে যখন তার নামে দরুদ পাঠ করা হয় এবং জিকির করা হয়, স্বয়ং আল্লাহ ও রাসুল কাবাঘর নিয়ে তার কাছে হাজির হন। আল্লাহ তার পক্ষে শ্লোগান দেন। রাসুলকে তিনি পূর্ণজীবন দান করেছেন। এমন বহু কথা লেখা আছে তার প্রকাশনা সংস্থা সুফি ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন বই এবং পত্রপত্রিকায়।
সুফি ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা, বই পুস্তক ঘেটে জানা যায়, ১৯৪৯ সালে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্ম নেন এই কথিক সুফি সম্রাট মাহবুবে খোদা। বাবা আবদুর রশিদ, মা যুবেদা খাতুন। মাদরাসায় সামান্য কিছু লেখাপড়া করেছেন। বিয়ে করেছেন নারায়ণগঞ্জের আরেক বিতর্কিত পীর, চন্দ্রপাড়া পীরের মেয়ে হামিদা বেগমকে। সেখান থেকেই মূলত তিনি পীরব্যবসার তালিম নেন এবং ১৯৮৬ সালে একই জেলার দেওয়ানবাগ এলাকায় এসে আস্তানা গাড়েন। নিজেকে দেওয়ানবাগী পীর বলে প্রচার করতে শুরু করেন। কিন্তু সেখানে তিনি বেশি দিন টিকতে পারেননি। বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্যে এলাকাবাসী তাকে বিতাড়িত করে। এরপর তিনি ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগে গড়ে তোলেন নতুন সাম্রাজ্য। রাতারাতি নির্মাণ করেন ১০ তলা একটি দালান। ঢাকায় আসার পর তার পীরব্যবসা জমে উঠতে শুরু করে তর তর করে। শহরের ধনাঢ্য ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিচারপতি, রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ীদের ক্রমশ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন তিনি। গড়ে তোলেন নিজস্ব মাস্তান বাহিনী। তাদের দিয়ে সরকারি জমিসহ আশপাশের আরও কিছু জমি দখল করে নেন। নির্মাণ করেন বিরাট আস্তানা। সাথে একটি উটের খামার করেন। দেশের পশু সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘন করে বেশ কিছু উট পালন করেন সেখানে এবং সেই উটের দুধ বিক্রি করেন চড়া দামে। জানা যায়, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি উটের দুধ বিক্রি হয় তার খামার থেকে। কিন্তু উটগুলো দুধ দেয় মাত্র ৪ থেকে ৫ কেজি। বাকি দুধের রহস্য কেউ জানে না। টেলিভিশনসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, দেয়ালে দেয়ালে লাল মোটা অক্ষরের চিকা মেরে শুরু করেন বিশ্ব আশেকে রাসুল সম্মেলন। অভিযোগ আছে, দেওয়ানবাগী তার শ্বশুর চন্দ্রপাড়া পীরের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণের টাকা চুরি করে পালিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে। পরে সেই টাকা দিয়েই দেওয়ানবাগ এবং আরামবাগের আস্তানা গড়ে তোলেন।

দেওয়ানবাগী তার নিজের গুণকীর্তন করার জন্যে এবং তার বিতর্কিত, ঈমান আকিদাবিরোধী বক্তব্য প্রচারের জন্যে সুফি ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন বই এবং চারটি পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। এসব পত্রিকার মধ্যে একটি হলো, মাসিক আত্মার বাণী। দেওয়ানবাগীর ভক্তরা মনে করেন এই পত্রিকা চুবিয়ে পানি খেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। দেওয়ানবাগী তার প্রকাশিত পত্রিকা এবং বইতে অসংখ্য বিতর্কিত এবং ইসলামের মূল বিশ্বাস পরিপন্থি কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আল্লাহ কোন পথে বইয়ের প্রথম সংস্করণের ২৩ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, তার স্ত্রী হামিদা বেগম এবং তার মেয়ে তাহমিনা সুলতানা আল্লাহকে গোঁফ-দাড়িবিহীন সুন্দর যুবকের আকৃতিতে দেখেছেন। তার আস্তানায় এসে আল্লাহ, সকল নবি রাসুলগণ এবং ফেরেশতারা মিছিল করেন। আল্লাহ নিজে তার পক্ষে শ্লোগান দেন। কোনো লোক যখন নফসির মাকামে গিয়ে পৌঁছায় তখন তার আর ইবাদত করার দরকার হয় না। সুতরাং দেওয়ানবাগীর নিজেরও কোনো ইবাদতের দরকার হয় না। ১৯৮৯ সালে দেখা একটি স্বপ্নের বর্ণনা করে দেওয়ানবাগী তার বইতে লিখেছেন, আমি দেখি, ঢাকা এবং ফরিদপুরের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বিশাল ফুলের বাগান। বাগানটির এক জায়গায় একটি ময়লার স্তুপ। ওই ময়লার উপর উলঙ্গ এবং মৃত অবস্থায় নবি পড়ে আছেন। আমি কাছে গিয়ে তার হাত ছোঁয়াতেই তিনি জীবিত হয়ে ওঠেন এবং হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হে ধর্মের পুনর্জীবনদানকারী। এর পর আল্লাহ এবং সকল নবি রাসুলগণ দেওয়ানবাগীকে নিয়ে মিছিল করেন। আল্লাহ দেওয়ানবাগীর পক্ষে শ্লোগান দেন। দেওয়ানবাগী তার জন্ম নিয়েও এক রসাত্মক কাহিনী রচনা করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, সুফি সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের জন্মগ্রহণের আগের রাতে তার মা স্বপ্ন দেখেন- আকাশে ঈদের চাঁদ উদিত হয়েছে। চাঁদ দেখতে তিনি ঘরের বাইরে এলে চাঁদটি আকাশ থেকে তার কোলে নেমে আসে। তখন তার মা বুঝতে পারেন, আল্লাহ তাকে সৌভাগ্যবান সন্তান দান করবেন। দেওয়ানবাগী কখনও হজ করতে যাননি। এর ব্যাখ্যায় তিনি তার বইতে লিখেছেন, স্বয়ং আল্লাহ কাবাঘর নিয়ে তার কাছে এসে উপস্থিত হয় তাই হজ করতে সৌদি যাওয়ার কোনো দরকার হয় না। সে নিজেকে মোহাম্মদি ইসলামের একমাত্র ধারক এবং মহামানব উল্লেখ করে নিজের নামে দরুদ রচনা করেছেন এবং তার ভক্তদের সেই দরুদ পাঠ করতে বাধ্য করেন।
দেওয়ানবাগী তার বই এবং বিতর্কিত পত্রপত্রিকার পক্ষে বিশিষ্টজনদের প্রশংসা ও অভিনন্দন বার্তা প্রকাশ করেছেন নানা সময়। বিশিষ্টজনদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, মন্ত্রী, এমপিরাও রয়েছেন। তবে যাদের নামে প্রশংসা বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই পরে জানিয়েছেন, দেওয়ানবাগী তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ, শামিম ওসমান, ফজলে রাব্বি, শামসুজ্জামান দুদুসহ অনেকেই দেওয়ানবাগীর শাস্তিও দাবি করেছিলেন। তার জালিয়াতি প্রমাণের জন্যে ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তের ফলাফল আজ অবধি জানা যায়নি। অনেকেই মনে করেন, সে সময়ের তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা পড়ার নেপথ্য কারণ হলো এমপি, মন্ত্রী, আমলাসহ অনেক ধনকুবের সাথে দেওয়ানবাগীর সখ্যতা। দেওয়ানবাগীর অপকর্ম এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস পরিপন্থি কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে প্রতিবাদ জানায় ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটি নামের একটি সংগঠন। সে সময় তাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানীও ঘটেছিল। সে সময় পুলিশ দেওয়ানবাগীর আস্তানায় হানা দিয়ে ব্যাপক গোলাবারুদ, হাতবোমা, বন্দুক, গুলি, রামদা, কিরিচ, চাকু, বল্লম, চাপাতি উদ্ধার করেছিল এবং তার ৪৩ জন্যে ক্যাডারকে গ্রেফতার করেছিল।
ক'মাস আগে দেশে গিয়েছিলাম। সে সময় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় দেখলাম দেওয়ানবাগ, রাজারবাগ, কুতুববাগ, চন্দ্রপাড়া, আটরশি, মাইজভান্ডারি, শুরেশ্বরিসহ প্রভৃতি পীরদের বিশাল বিশাল তোরণ। পথে প্রান্তরে হাজার হাজার ব্যানারে ঝুলছে তাদের বিতর্কিত বাণী। মাইলকে মাইল জুড়ে রাস্তার দুই ধারে তাদের নামে ফ্লাগ টানিয়ে রাখা হয়েছে। মোটা মোটা অক্ষরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাল কালি দিয়ে চিকা মেরে রাখা হয়েছে। সরকারি জায়গা, সাধারণ মানুষের জায়গা দখল করে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো আটক করে তারা ওরশের আয়োজন করেছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সারা দেশে তোরণ বানিয়েছে। কোনো কোনো তোরণের চূড়ায় কালো কাপড় দিয়ে কাবাঘরের আকৃতি তৈরি করতে দেখেছি। এসব কা-কারখানা দেখে বারবার শুধু মনে হয়েছে, এরা কোথায় পায় এতো টাকা? এদের আয়ের উৎস কী? এদের বিপুল ক্ষমতার উৎস কোথায়? খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এরা মূলত সবাই ইসলামের মৌলিক আদর্শ এবং বিশ্বাস পরিপন্থি কর্মকান্ডে লিপ্ত। এদের সকলের গোড়া একই জায়গায়। বিভিন্ন নামে চালিয়ে যাচ্ছে পীরব্যবসা। এদের অবশ্য পীর বলা ঠিক না। কারণ যে অর্থে আমাদের দেশে পীর শব্দটা ব্যবহারিত হয় এরা তার ঠিক বিপরীত। এরা সমাজের একটি জঘন্য দুষ্টুচক্র। এদের পীর বললে দেশের হক্কানি পীরদের অসম্মান করা হয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। ইসলামের মৌলিক জ্ঞান এদের কারও মধ্যে নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিধিও খুব সামান্য। ধর্মের নামে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়াই এদের কাজ। সমাজের বড় বড় অসাধু ধড়িবাজ কালো টাকাধারীরাই এদের বিপুল অর্থের উৎস। অসাধু রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বিচারপতি এবং আমলারাই এদের মাথার ছাতা। ওরসের সময় অসৎ ব্যবসায়ী এবং নির্বোধ সাধারণ মানুষরা প্রতিযোগিতা করে টাকা দেয় এদের খুশি রাখতে। তারা মনে করে, পীর খুশি থাকলেই তাদের সব মুশকিলের আসান হবে। যাবতীয় নিয়ত পূরণ হবে। বাস্তবে হয়ও তাই। পুলিশের ঘুষের টাকার মতো কথিত এই পীরদের ওরশ বা আশেকে রাসুল সম্মেলন থেকে আয়ের টাকা টপ টু বটম ভাগ হয়। এলাকার মান্তান, প্রশাসন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের শীর্ষমহল পর্যন্ত টাকার ভাগবাটোয়ারা হয়। সমাজের সকল বড় বড় অন্যায়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এইসব কথিত পীররা। ধর্মের আড়ালে তারা তাদের আস্তানা থেকে গুটি চালে। এধার কা মাল ওধার করে। সাধারণ মানুষের সামনে একটা মিথ্যা আধ্যাত্ম্যিক জগত সৃষ্টি করে রাখে।এইসব পীরদের কথা বলার ধরন দেখলে যে কারও মনে হবে এরা স্রেফে নেশাগ্রস্ত বিকার মানুষ ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ হাজার হাজার মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো এদের কথা শোনে। ভক্তি করে। শ্লোগান দেয়। কারণ এরা ধর্মের নামে এক রকম মিথ্যাজগৎ সৃষ্টি করে রাখে মানুষের চোখের সামনে। তাছাড়া এদের কাছে গেলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পর্দার মতো ইসলামের মৌলিক কোনো নির্দেশ পালন করতে হয় না; বরং মদ, গাঁজা, জুয়া, যৌনাচার সবই করা যায় অবাধে। অন্যায় অপকর্ম কোনো কিছুতেই পীরের নিষেধ নেই। এমন সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায়? যারা কথিত এইসব পীরদের কাছে যায় তারা এতোটা বোকা কেউ না যে জাগতিক এমন সুযোগ হেলায় হারাবে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যারা কথিক এই পীরদের কাছে যায় তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে অনৈতিক কাজের প্রতি আসক্ত। নির্বিঘ্নে নিজেদের আসক্তি মেটাতেই তারা যায় কথিত পীরদের আস্তানায়। এই সুযোগ গ্রহণ করে কথিত পীররা। ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা এবং জাগতিক মোহই এইসব পীরদের প্রধান পুঁজি। এরা প্রতিনিয়ত মনগড়া কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। ধর্মের আড়ালে এরা অপরাধ জগতের এক একজন ঘাপটিমারা সম্রাট। এদের নিয়ন্ত্রণে দেহব্যবসা, মাদকব্যবসা, খুন-খারাবি থেকে শুরু করে সকল অপকর্ম সংঘটিত হয়। অথচ এসব নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। দুদক বা ইনকাম ট্যাক্স ওয়ালারা এদের আয় ইনকাম বা সম্পদের খোঁজ নিতে যায় না। হেফাজতের নাস্তিকবিরোধী আন্দোলন দেখে কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলাম। ওই আন্দোলনটি বাঁচিয়ে রাখতে পারলে এক সময় ইসলামের মৌলিক আদর্শবিরোধী এসব কথিক পীরদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা যেতো। সাধারণ মানুষকে এদের ভন্ডামির বিষয়ে সচেতন করা যেতো। কিন্তু তা হলো না। সরকারী কূটকৌশলে হেফাজত এখন নিজেই হেফাজতে আছে।