সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। সেসময় তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে
আলোচনা হয়েছে। এর আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর
পরিদর্শন করে শোক বইতে সই করেন তিনি। সোমবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ এইচ মাহমুদ আলী। সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে জন কেরিকে বহনকারী যুক্তরাষ্ট্র
বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
বিমানবন্দরে মার্কিন পরাষ্ট্র
মন্ত্রীকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দেয়া
হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা।
এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু
স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন জন কেরি। জাতির পিতার ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী
এই মন্ত্রী। এরপর শোক বইতে সাক্ষর করেন জন কেরি। প্রথমবারের মার্কিন কোনো
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে তার কার্যালয় যান জন কেরি। সেখানে তাকে স্বাগত জানান
শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তাঁর
কার্যালয়ে দেখা করতে যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা
বৈঠকে সন্ত্রাস, দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ও
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরতের বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে
আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করতে তাঁদের অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন। তাঁরা সহযোগিতা করতে চান। সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে লড়াই করবে। সন্ত্রাস বিষয়ে তথ্য
আদান-প্রদান এবং বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার আগ্রহও
প্রকাশ করেছেন কেরি।
ব্রিফিংয়ে ইহসানুল করিম বলেন, সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, সন্ত্রাস বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশ
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করছে, জনগণ সহযোগিতা করছে। ধর্মীয় নেতারা
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে কাজ করছেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন
পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাস বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদানের ওপর
গুরুত্ব দিয়ে জন কেরিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র
প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। তাদের কাছে অনেক তথ্য আসে। বাংলাদেশকে সেই তথ্য দিলে
জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের ধরতে সুবিধা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-অর্থ কোথায়
পায়? প্রধানমন্ত্রী এমন প্রশ্ন করলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, তাদের
দখলে থাকা তেলক্ষেত্র থেকে তেল বিক্রি করে এবং ব্যাপক চাঁদাবাজি করে সন্ত্রাসীরা
অস্ত্র সংগ্রহ করে। সন্ত্রাসে যুক্ত হওয়া তরুণদের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বিত্তবান পরিবারের সন্তানেরাও এর সঙ্গে যুক্ত
হচ্ছে। এটা আশ্চর্য। তাদের সবকিছু থাকার পরও মা-বাবা ঠিকমতো সময় না দেওয়ায় তারা এর
সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে জন কেরি বলেন,
মা-বাবা ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর এখন ছেলেমেয়েরা প্রচুর সহিংসতাপূর্ণ ভিডিও গেমস
খেলে।
ব্রিফিংকালে জানানো হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু
নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত দিতে জন কেরির প্রতি অনুরোধ জানান। এ সময় মার্কিন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার কষ্ট বুঝি। এ বিষয়টি পর্যালোচনা
পর্যায়ে আছে।’ এ সময় তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পরিদর্শন
ও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভবনের ইতিহাস
তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, সন্ত্রাস ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে
একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে জন কেরি বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য,
জ্বালানিসহ অন্য অনেক ক্ষেত্রেই দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এ সময়
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আহ্বান করেন। একই সঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্ত্র ছাড়া সব বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত
প্রবেশাধিকারের সুযোগ চান। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও
মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে জন কেরি বলেন যে
উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুর্দান্ত কাজ করছে।
সাক্ষাৎকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা গওহর
রিজভী, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন,
পররাষ্ট্রসচিব শহিদুল হক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম,
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও
মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন
রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকার মার্কিন
দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জন কেরি সফর শেষে সন্ধ্যায় দিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন জন কেরি।
0 comments:
Post a Comment
Thanks for Comment